
প্রতিনিধি, অনুপম পাল, চন্ডিপুর
কৃষকদের বহুমুখী পরিষেবা প্রদান ও তাদের স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে চন্ডিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ছনতৈল গ্রামে নির্মিত হলো কৃষক বন্ধু কেন্দ্র। বুধবার রাজ্যের কৃষি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ এবং যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের মন্ত্রী টিংকু রায়ের উপস্থিতিতে এই কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮২ লক্ষ ২৮ হাজার ৪০০ টাকা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষকদের হাতে সরকারি খরচে পাওয়ার উইডার, পাওয়ার স্প্রে, চারা গাছ এবং পাওয়ার টিলার বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি ১০ জন প্রগতিশীল কৃষককে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক ও সমাহর্তা ড. তমাল মজুমদার, জেলা সভাধিপতি অমলেন্দু দাস, উদ্যান দপ্তরের অধিকর্তা দীপক কুমার দাস, জেলা পরিষদের সদস্য বিমল কর, সমাজসেবী প্রদীপ বরন রায় ও পিন্টু ঘোষ, এডভোকেট সন্দীপ দেবরায় প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন চন্ডিপুর পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন সম্পা দাস পাল।
উদ্যান দপ্তরের অধিকর্তা দীপক কুমার দাস স্বাগত বক্তব্যে জানান, রাজ্যের ৩৩তম কৃষক বন্ধু কেন্দ্র হিসেবে ছনতৈল গ্রামে এই প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্র হলো কৃষকের মাঠ, আর এই কেন্দ্র হবে তারই সেতুবন্ধন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী টিংকু রায় বলেন,“কৃষি ক্ষেত্র যত বেশি উন্নত হবে, কৃষকের জীবনমান তত উন্নত হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আত্মনির্ভরশীল ভাবনায় প্রতিটি কৃষককে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার মধ্য দিয়েই বৈভবশালী ভারত গড়ে তোলা সম্ভব। শুধু কৃষি নয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা, রেল সম্প্রসারণ, গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন—সবক্ষেত্রেই বর্তমান সরকারের হাত ধরে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে।”
তিনি আরও জানান, ছনতৈল ফলবাগানে ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প বেম্বু মিশনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে এবং বীরচন্দ্রনগরে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকুয়া পার্ক তৈরি হবে। পূর্বতন বাম সরকারকে আক্রমণ করে তিনি অভিযোগ করেন, চা বাগানের শ্রমিকদের প্রকৃত উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা, অথচ বিজেপি সরকার ইতিমধ্যে প্রায় ৪ হাজার চা শ্রমিক পরিবারকে জমির পাট্টা ও প্রায় ৫ হাজার পরিবারকে প্রায়োরিটি গ্রুপ রেশন কার্ডের আওতায় এনেছে।
কৃষি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ তাঁর বক্তব্যে বলেন,“চন্ডিপুরের ৬৪,১১০ জন মানুষের মধ্যে প্রায় ৪২ হাজারই কৃষিজীবী। বছরে এখানে ১৪ হাজার ৭৭৯ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়। তাই কৃষকরা আমাদের অন্নদাতা। চাল উৎপাদনে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় এবং রপ্তানিতে প্রথম স্থানে রয়েছে। ২০১৮ পর্যন্ত ত্রিপুরায় ১৯৯ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক ছিল, আজ তা বেড়ে হয়েছে ৯২৩ কিলোমিটার। ৮৪ শতাংশ বাড়িতে জল সংযোগ দেওয়া হয়েছে।”
মন্ত্রী পামওয়েল চাষের উপর জোর দিয়ে বলেন, এই চাষ সরকারি সহায়তায় টিলা ভূমিতে উৎকৃষ্ট মানের ফলন দেয়, যার বাজারমূল্যও বেশি। উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে তিনি জানান, গত ৭ বছরে রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তর জাতীয় স্তরের বিভিন্ন মঞ্চ থেকে ৪২২টিরও বেশি পুরস্কার অর্জন করেছে। পাশাপাশি তিনি পিএম সূর্য ঘর প্রকল্পের মাধ্যমে সোলার সংযোগ ও সাবসিডি সম্পর্কেও আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় মানুষের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য, যা প্রমাণ করে কৃষক বন্ধু কেন্দ্র নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে আগ্রহ ও প্রত্যাশা প্রবল।