
আগরতলা,নিজস্ব প্রতিনিধি, বিশ্বখ্যাত বিপ্লবী নেতা এবং আধুনিক চীনের স্থপতি মাও সে তুং-এর ১৩২তম জন্মদিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সিপিআইএম-এর রাজ্য দপ্তরে আয়োজন করা হয় এক স্মরণীয় অনুষ্ঠানের। মাও-এর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন সিপিআইএম রাজ্য কমিটির সদস্য পবিত্র কর, প্রাক্তন বিধায়ক রতন দাসসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।
অনুষ্ঠানে মাও সে তুং-এর বিপ্লবী জীবন ও চিন্তাধারা নিয়ে আলোচনা করেন পবিত্র কর। তিনি বলেন, “মাও সে তুং-এর বিপ্লবী নেতৃত্ব শুধু চীন নয়, গোটা পৃথিবীর জন্য একটি অনন্য উদাহরণ। তার চিন্তা ও কার্যক্রম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে হবে।”
মাও সে তুং-এর জন্ম ১৮৯৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর চীনের হুনান প্রদেশের শাওশান গ্রামে। একজন সম্ভ্রান্ত কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি কৈশোরেই চীনের সামাজিক ও রাজনৈতিক অসাম্যের বিরুদ্ধে সচেতন হয়ে ওঠেন। তার জীবন বদলে দেয় ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদ দর্শনের প্রতি তার গভীর অনুরাগ।
১৯২১ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণ করে তিনি দ্রুত পার্টির নেতৃত্বে উঠে আসেন। কুওমিনট্যাং সরকারের রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে তিনি কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণিকে সংগঠিত করেন। ১৯৩৪ সালে বিখ্যাত “লং মার্চ”-এর মধ্য দিয়ে মাও-এর নেতৃত্ব গেরিলা যুদ্ধ কৌশল এবং সংগঠনের শক্তি প্রদর্শন করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কমিউনিস্ট ও কুওমিনট্যাং বাহিনী একত্রিত হলেও যুদ্ধশেষে মাও-এর নেতৃত্বে চীনের গৃহযুদ্ধে কমিউনিস্টরা বিজয়ী হয়। ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করেন তিনি।
মাও-এর দর্শন, যা মাওবাদ নামে পরিচিত, বিশেষত কৃষি অর্থনীতির উপর ভিত্তি করে সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দিকে দিকনির্দেশনা দেয়। তিনি চীনের ঐতিহ্য ও সমাজকে বিপ্লবের সাথে সম্পৃক্ত করে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করেন।
পবিত্র কর আরও বলেন, “মাও সে তুং-এর বৈপ্লবিক চিন্তা চেতনা আমাদের জন্য দিকনির্দেশনা। তার সংগ্রাম শুধু চীনের জন্য নয়, সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের জন্য প্রাসঙ্গিক।” তিনি সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে আরও বেগবান করার জন্য মাও-এর জীবন ও দর্শনকে পাথেয় হিসেবে গ্রহণের আহ্বান জানান।
উক্ত অনুষ্ঠানটি মাও সে তুং-এর জীবন ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ভবিষ্যতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নতুন করে শপথ নেওয়ার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।