
প্রতিনিধি অনুপম পাল
কৈলাসহর,ঊনকোটি ত্রিপুরা
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী যখন রাজ্যকে নেশামুক্ত করার জন্য একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তখন সাধারণ মানুষও সেই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হচ্ছেন। কৈলাসহর লাঠিয়াপুরা গ্রাম পঞ্চায়েতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা তারই প্রমাণ। নেশার ভয়াল ছোবল থেকে সমাজকে রক্ষা করতে রবিবার সকালে উত্তেজিত জনতা একত্রিত হয়ে এক নেশা বিক্রেতার বাড়িতে অভিযান চালায় এবং তার বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেয়।
লাটিয়াপুড়া এলাকার বাসিন্দা দেবদাস দেবনাথ দীর্ঘদিন ধরে ব্রাউন সুগার, ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন নেশা দ্রব্য বিক্রি করছিলেন বলে অভিযোগ। তার কারণে এলাকার অনেক যুবক ও শ্রমজীবী মানুষ নেশার কবলে পড়ে পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।স্থানীয়রা জানান,দেবদাস দেবনাথের পাশের বাড়ির এক দিনমজুর ব্যক্তি নেশাগ্রস্ত হয়ে পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করেন প্রতিদিন, যার ফলে তার স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। হতাশাগ্রস্ত হয়ে সেই দিনমজুর কিছুদিন পূর্বে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে রক্ষা করে।
এই ঘটনা এলাকার মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করে এবং তারা একজোট হয়ে শনিবার রাতে সিদ্ধান্ত নেয় যে, দেবদাস দেবনাথের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, রবিবার সকাল ৮টার সময় শতাধিক গ্রামবাসী অভিযানে নামে। তারা দেবদাস দেবনাথ ও তার স্ত্রীকে ধরে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে এবং তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে নেশা সামগ্রী উদ্ধার করে। এরপর খবর দেওয়া হয় কৈলাসহর ইরানি থানায়। পুলিশ ও টিএসআর বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে দেবদাস দেবনাথ ও তার স্ত্রীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসন যেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং এই চক্রের মূল হোতাদের খুঁজে বের করে।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যকে নেশামুক্ত করার লক্ষ্যে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন এবং নেশা বিরোধী অভিযান জোরদার করেছেন। পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে এবং এই ধরনের সমাজবিধ্বংসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। কৈলাসহরের মানুষ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন, তা রাজ্যের অন্যান্য এলাকাতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন মহকুমাবাসী।
স্থানীয়দের দাবি,এই ঘটনার পর প্রশাসনের উচিত নেশার চক্র নির্মূল করতে আরও কঠোর হওয়া এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ অভিযান চালানো। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ত্রিপুরা যদি সমবেতভাবে এই মাদক দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যায়, তবে নেশামুক্ত ত্রিপুরার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হবে।