
Oplus_131072
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
বিগত ২০২৪ সালের গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ধলিয়াকান্দি পঞ্চায়েতের ১১টি আসনের মধ্যে ৭টি দখল করে বিজেপি, আর ৪টি যায় কংগ্রেসের হাতে। দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বিজেপি থেকে রেবা রানী নমঃ বিশ্বাস প্রধান এবং তোফাইল আহমেদ উপ প্রধান পদে নির্বাচিত হন। শুরুর দিকে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা গেলেও, গত কয়েক মাসে পরিস্থিতি বদলে যায়। অভিযোগ, প্রধান ও উপপ্রধান দলীয় সহযোগীদের অবজ্ঞা করে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন এবং দুর্নীতির পথেও পা বাড়ান।
কৈলাসহরে আবারও প্রমাণিত—রাজনীতি এখন আর জনসেবা নয়, একেবারে ধারাবাহিক নাটকের চিত্রনাট্য! গৌরনগর ব্লকের অন্তর্গত ধলিয়াকান্দি গ্রাম পঞ্চায়েতে শাসকদল বিজেপি-র নাট্যগীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে ‘অনাস্থা ভোট’ আসার আগেই প্রধান-উপপ্রধান মঞ্চ ছেড়ে দিয়ে গেলেন—একেবারে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ নামক অভিনয়ের মুখোশ পরে!
রেবা রানী নমঃ বিশ্বাস ও তোফাইল আহমেদ—যাঁরা কিনা ২০২৪ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির বিজয়রথে চড়ে যথাক্রমে প্রধান ও উপপ্রধান হয়েছিলেন—তাঁরা হঠাৎ করেই বুঝলেন, রাজনীতি নয়, ব্যক্তিগত জীবনই বড়! তাই ৮এপ্রিল অনাস্থা ভোট হওয়ার তিনদিন আগে, ৫ এপ্রিল বিকেলে গিয়ে ধপ করে জমা দিলেন পদত্যাগপত্র গৌরনগর বিডিও নবারুন চক্রবর্তীর হাতে।
বিডিও বাবু যথারীতি দায়িত্বপূর্ণ ভঙ্গিতে জানালেন, “উনারা স্বেচ্ছায়, ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন।” হ্যাঁ, অবশ্যই—যেমন স্কুলে ছাত্র না পড়ার জন্য জ্বরের ভুয়া ছুটি চিঠি আনা হয়, তেমনই!
কিন্তু রাজনীতির গলিঘুঁজির খবর রাখে যে ‘সূত্র’-রা, তারা কিন্তু বলছে ভিন্ন কথা।
তাঁদের মতে, এই পদত্যাগ একেবারেই গোষ্ঠী কোন্দলের ফল—আর লক্ষ্য একটাই: কৈলাসহর মণ্ডল সভাপতি প্রীতম ঘোষকে রাজনৈতিক দড়ির মাঝে ফাঁসিয়ে ফেলা।
শোনা যাচ্ছে, প্রীতম ঘোষের জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক দাপট, আর জনসংযোগ দেখে ঈর্ষায় পুড়ে খাক হচ্ছেন দলের ভেতরের একাংশ। তাই কিছু ‘অক্ষর শ্রমিকদের’ সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে শাসক দলেরই এক গোষ্ঠী এখন ‘মিশন প্রীতম হঠাও’ খেলায় মেতেছে।
ধলিয়াকান্দি পঞ্চায়েত তো শুধু উপলক্ষ!
ভেতরে ভেতরে চলছে “গোষ্ঠী বনাম গোষ্ঠী অলিম্পিক”। প্রধান ও উপপ্রধানকে সামনে রেখে চালানো হয়েছে এমন এক চাল, যাতে প্রীতম ঘোষ পড়ে যান চাপে। কী সাংঘাতিক কৌশল!
এদিকে জনগণের কপালে এখন শুধু বিরক্তির ভাঁজ—“ভোট দিয়ে কাউকে পাঠাই উন্নয়ন করতে, সে গিয়ে পড়ে গোষ্ঠী তালে!”
কৈলাসহরের বিজেপি যেন এখন
‘এক দল, দুই গোষ্ঠী, শত ষড়যন্ত্র’
নামক নতুন মডেল নিয়ে মাঠে নেমেছে।
শাসনের জায়গায় চলছে ‘কে কাকে ফাঁসাবে’ খেলা, আর পঞ্চায়েত অফিস হয়ে উঠেছে জাস্ট এক চুপিচুপি ষড়যন্ত্র সভা কক্ষ।
এইভাবে চলতে থাকলে খুব শিগগির হয়তো দলীয় মিটিংয়ে লাটিম ঘোরানো আর ‘চোর পুলিশ’ খেলাও যুক্ত হয়ে যাবে।
আর জনগণ? তারা তো এখন চোখ তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধু একটা কথাই ভাবছে—“এই দল না উন্নয়ন আনবে, ওরা তো নিজেদের সামলাতেই ব্যস্ত!”