
✍️প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর,ঊনকোটি ত্রিপুরা
শ্রীনাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় উনিশ বছর বয়সী নববিবাহিত গৃহবধূ জাহানারা বেগমের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, যৌতুকের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার।
জাহানারার ভাই আব্দুল আজাদ ইরানি থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তরা হলেন জাহানারার স্বামী আশরাফুল ইসলাম, তার নিকট আত্মীয় আব্দুল মন্নান, এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য হাজেরা বেগম, শফিকুর রহমান ও হুছনা বেগম। অভিযোগে বলা হয়েছে, জাহানারার ওপর যৌতুকের জন্য চাপ দেওয়া হতো এবং যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে নির্যাতন করা হতো।
বিবাহের পর থেকেই জাহানারার ওপর যৌতুকের জন্য অকথ্য অত্যাচার চলতে থাকে। অভিযোগে জানা গেছে, অভিযুক্ত আব্দুল মন্নান জাহানারাকে কুপ্রস্তাবও দিতেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার বিচার হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। স্বামী আশরাফুল ইসলাম বহি রাজ্যে কাজের জন্য যাওয়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে।
সোমবার বিকেলে জাহানারার বাপের বাড়ির লোকজন খবর পান জাহানারা বেগম মারা গেছেন। পরিবার তার স্বামীর বাড়িতে পৌঁছে দেখে, ঘরের সামনের দরজা তালাবদ্ধ এবং পিছনের দরজা খোলা। ঘরের ভেতরে গলায় শাড়ি পেঁচানো অবস্থায় জাহানারার মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। মৃতদেহের অবস্থান দেখে স্পষ্ট হয়, এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারন গলায় শাড়ি পেঁচানো থাকলেও জাহানারার মৃতদেহ ঘরের মেঝের সাথে গড়াগড়ি খাচ্ছিলো।
পুলিশ এখন পর্যন্ত পাঁচ অভিযুক্তের মধ্যে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে। তবে বাকি তিনজনের মধ্যে দুইজন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যা পুলিশি তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অন্যদিকে, মূল অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলামের খোঁজে বহি রাজ্যে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
এ ধরনের একটি গুরুতর মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ জাহানারার বাপের বাড়ির লোকজন। একদিকে অভিযোগপত্রে অভিযুক্তদের নাম স্পষ্ট থাকা সত্ত্বেও তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে, এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশের ধীর গতির তদন্ত এবং আসামিদের প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করার সুযোগ দেওয়া বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করছে।
মৃত জাহানারার পরিবার বর্তমানে শোকে স্তব্ধ। তারা ন্যায়বিচারের দাবিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। স্থানীয়রা এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
যৌতুক প্রথা সমাজের একটি মারাত্মক ব্যাধি। এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের নয়, গোটা সমাজের কাছে একটি সতর্কবার্তা। প্রশাসনের উচিত, দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। তা না হলে এ ধরনের নির্মম ঘটনা বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
জাহানারার মৃত্যুর আড়ালে লুকিয়ে থাকা নির্মম সত্য যদি প্রকাশিত না হয়, তবে এটি শুধু একটি মেয়ের ন্যায়বিচারের প্রশ্ন নয়, বরং সমাজের প্রতি একটি বড় অপরাধ। সমাজ ও প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগেই কেবল এমন অন্যায় বন্ধ করা সম্ভব।