
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
শতবর্ষ প্রাচীন কৈলাসহরের টিলাবাজার জামে মসজিদের ভেতর থেকে শূকরের মাংস ও একটি চিঠি উদ্ধারকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাজুড়ে। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও টিএসআর মোতায়েন করা হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যার প্রাক্কালে মসজিদের ইমাম প্রথমে মাংস ভর্তি প্লাস্টিক প্যাকেটটি দেখতে পান। পরে স্থানীয়রা খবর পেয়ে মসজিদের ভেতরে থাকা প্যাকেট খুলে শূকরের মাংস ও একটি চিঠি উদ্ধার করেন।
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই গৌরনগর ব্লকের ভাইস চেয়ারম্যান মহম্মদ বদরুজ্জামান, ত্রিপুরা রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন বিধায়ক মফস্বর আলী, টিলাবাজার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অহিদুজ্জামান সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এদিকে ইরানি থানার ওসি বিরাজ দেববর্মা, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জয়ন্ত কর্মকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এল দারলং এবং ডেপুটি মেজিস্ট্রেট মতি লাল দেববর্মাসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে যান।
গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির ভাইস চেয়ারপার্সন বদরুজ্জামানের বলেন, “১০০ বছরের ঊর্ধ্বে আমাদের এই টিলা বাজারের জামে মসজিদ। এখানে প্রতিদিন আমাদের মুসল্লীরা নামাজ পাঠ করেন। গতকাল রাতে কিছু দুষ্কৃতকারী একটা ব্যাগের মধ্যে শূকরের মাংস রেখে কৈলাশহরের শান্তি-সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইছে। এর আগে কনকপুরে আমাদের মসজিদের দান বাক্স চুরি হয়, পরবর্তী সময় পুলিশ সেটা উদ্ধার করে। এর পূর্বে গৌরনগর মসজিদ থেকেও দান বাক্স নিয়ে যায়। উদয়পুরে কিছুদিন আগে মসজিদের ভেতরে শূকরের মাংস রাখা হয়েছিল, এবং পুলিশ যাকে গ্রেফতার করেছে সে একজন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের লোক, বর্তমানে সে জেলে রয়েছে।
এইভাবে কৈলাশহরের শান্তি-সম্প্রীতি নষ্ট করার একটা চেষ্টা চলছে। আমরা কৈলাশহরের সর্বস্তরের মানুষের কাছে আবেদন রাখব, আমাদের মধ্যে যে সম্প্রীতি ও ভালোবাসা রয়েছে, সেই সম্প্রীতি যেন নষ্ট না হয়। আমি বিশেষ করে মুসলিম যুব সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানাচ্ছি—এই বিষয় নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে কোনো ধরনের গুজব ছড়ানো যাবে না, যাতে পরিস্থিতি বিনষ্ট না হয়। যদি পরিস্থিতি বিনষ্ট হয় তাহলে এটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। তাই সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
মাংসের পাশাপাশি ব্যাগের মধ্যে একটা চিঠি ছিল। সেই চিঠিতে লেখা ছিল—‘আজ থেকে তিন-চার শত বছর আগে ত্রিপুরা রাজ্য হিন্দুদের রাজ্য ছিল। এটা গৌড় গোবিন্দের জায়গা। তাই মসজিদ যেন ভেঙে দেওয়া হয়।’ এই চিঠির মাধ্যমে দুষ্কৃতিকারীরা এমন আহ্বান করেছে।
আমি পঞ্চায়েত সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে গোটা মহকুমাবাসীর কাছে একান্তভাবে আহ্বান জানাচ্ছি, শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখুন।”
রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান মফস্বর আলির বলেন,“এই কাজ কে করেছে, কেউ দেখেনি। সবাই শুধু অনুমান করে কথা বলছে। তবে এটা নিশ্চিত যে কোনো দুষ্কৃতিকারীই এই জঘন্য কাজ করেছে। এর সাথে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে অবিলম্বে গ্রেফতার করার জন্য আমি পুলিশের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।”