
প্রতিনিধি অনুপম পাল। কৈলাসহর
মোদি সরকারের আমলে শ্রমজীবী মানুষের জীবনে কাজের সংকট ক্রমশ বাড়ছে, অথচ কর্পোরেটদের স্বার্থরক্ষায় একের পর এক আইন তৈরি হচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদের অধিকার খর্ব হচ্ছে— রবিবার কৈলাসহরে অনুষ্ঠিত সিআইটিইউ-র ত্রয়োদশ মহকুমা সম্মেলনের জনসভায় এমনই মন্তব্য করলেন সংগঠনের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন সাংসদ শংকর প্রসাদ দত্ত।
তিনি বলেন, “শ্রমজীবী মানুষের অর্জিত আট ঘণ্টা কাজের অধিকার আজ উপেক্ষিত। নূতন শিল্প, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে না। শতাধিক ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নির্মাণ শ্রমিকরা কাজ হারাচ্ছেন। রাজ্যের বহু মানুষকে কাজের সন্ধানে বাইরে যেতে হচ্ছে। অন্যদিকে রেগা ও টুয়েপ প্রকল্পের কাজও কমে গেছে। দুর্নীতি ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনা বাড়ছে।”
সিআইটিইউ-র এই মহকুমা সম্মেলনের সূচনা হয় শহরের সুনীতিবালা মজুমদার স্মৃতি ভবনে, যা বর্তমানে সিপিআই(এম)-এর নবনির্মিত জেলা কার্যালয় হিসেবে পরিচিত। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাম সংগঠনের সহ-সভাপতি তপন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, সংগঠনের আদর্শগত ভিতকে দৃঢ় করে শ্রমিক স্বার্থের আন্দোলনকে আরও তেজী করতে হবে। এদিনের সম্মেলনে বিভিন্ন সেক্টর থেকে মোট ২১৯ জন শ্রমিক প্রতিনিধি যোগ দেন।
সম্মেলন উপলক্ষে বিকেলে শহরের পুরপরিষদ কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয় এক প্রকাশ্য জনসভা। সভাপতিত্ব করেন নবনির্বাচিত মহকুমা সভাপতি স্বপন আচার্য। আলোচনায় অংশ নেন শংকর প্রসাদ দত্ত, নবনির্বাচিত মহকুমা সম্পাদক নিরঞ্জন রায় ও রাজ্য পরিষদের সদস্য কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নিরোদ সাহা, মনোজিৎ ঘোষ, অঞ্জন রায়, বন্দন গোপসহ রাজ্য ও জেলার একাধিক নেতৃত্ব।
সম্মেলনের শুরুতে মহকুমা সভাপতি বন্দন গোপ পতাকা উত্তোলন করেন এবং শহিদ বেদীতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দেবদুলাল দেব। মহকুমা সম্পাদক অঞ্জন রায়ের পেশ করা সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের উপর ২৪ জন প্রতিনিধি আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনায় উঠে আসে— চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি না পাওয়া, পরিবহণ শ্রমিকদের সমস্যা, রেগা-টুয়েপ প্রকল্পে কাজের ঘাটতি এবং পেশাগত নানা ক্ষেত্রে কাজের সংকট ইত্যাদি।
শেষে ৩৮ সদস্যের মহকুমা কমিটি গঠন করা হয়। সভাপতি নির্বাচিত হন স্বপন আচার্য এবং মহকুমা সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন নিরঞ্জন রায়। সম্মেলনে মূল বক্তৃতা রাখেন শংকর প্রসাদ দত্ত, তপন চক্রবর্তী ও নিরোদ সাহা। সভাপতিমণ্ডলীতে ছিলেন বদরুল ইসলাম খান, স্বপন আচার্য ও মায়া মিত্র।
সম্মেলন উপলক্ষে পুরো এলাকা লাল পতাকা ও ফ্লেক্সে সাজিয়ে তোলা হয়। শ্রমিকদের স্বার্থে আগামীর লড়াইকে তীব্র করার আহ্বান জানান বক্তারা এবং কর্পোরেটপন্থী নীতি ও ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়।