Oplus_131072
প্রতিনিধি অনুপম পাল, কৈলাসহর
ঠিকাদারি বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে কৈলাসহরের গৌরনগর আরডি ব্লকের টিলাবাজার পঞ্চায়েত এলাকা মঙ্গলবার বিকেলে পরিণত হয় যুদ্ধক্ষেত্রে। দুপুরে পূর্ত দপ্তরের অফিসে তীব্র বাক-বিতণ্ডার পর সন্ধ্যা নাগাদ পরিস্থিতি চরম আকার নেয়। টিলাবাজারের ব্যস্ত বাজার এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি ছোঁড়া হয়, দা-সহ ধারালো অস্ত্র বেরিয়ে আসে, ছুটে পালায় সাধারণ মানুষ। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই।ঘটনার সূত্র ইরানি ও লাঠিয়াপুরা পঞ্চায়েতের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ঠিকাদার গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব। অভিযোগ, টিলাবাজারের এক ঠিকাদারের লাইসেন্সে তার ভাই গ্রামের রাস্তা নির্মাণের টেন্ডার পাওয়ার পর থেকেই ইরানি ও নুরপুর পঞ্চায়েতের কয়েকজন ঠিকাদার ক্রমাগত হুমকি দিয়ে আসছিল। টেন্ডার প্রত্যাহার না করলে ‘মারার’ ভয় দেখানো হচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার সেই হুমকিই বিস্ফোরণের রূপ নেয়। আহত ঠিকাদার মিঠুন আলীর ভাই লিটন আলীর অভিযোগ—“তেরামিয়া, সফাত মিয়া, ইমরান আলী, সুফিয়ান আলীসহ কয়েকজন টিলাবাজারে ঢুকে প্রথমে গুলি ছোড়ে। তারপর দা নিয়ে হামলা চালায়। আমরা প্রাণ হাতে নিয়ে পালাই। ইমরান নিজের গাড়ি ফেলে পালায়, পুলিশ সেই গাড়ি থেকে দা উদ্ধার করেছে।”
এ ঘটনায় মোট পাঁচজন আহত হন—
আব্দুল সামিম (মিটন) (৩৫), আব্দুল হান্নান (৪৫), জাকির হোসেন (৪০), সফাত মিয়া (৪৯), হুসেন আহমেদ (২৫)।
সকলেই ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যে আব্দুল সামিম, আব্দুল হান্নান এবং জাকির হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের সোমবার রাতেই আগরতলা জিবি হাসপাতালে রেফার করার প্রস্তুতি চলছে।ঘটনার পর থেকেই টিলাবাজার ও জেলা হাসপাতালে বিশাল পুলিশ ও টিএসআর মোতায়েন করা হয়েছে। বাজারজুড়ে টহলদারি বাড়ানো হয়েছে।
মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রুঘুল এ ঘটনা সম্পর্কে বলেন— “টিলাবাজার এলাকায় আজ কিছু অশান্তি হয়েছে। চার-পাঁচজন আহত হয়েছেন। কয়েকজনকে রেফার করা হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। পুলিশ কড়া নজরদারি চালাচ্ছে।”
তবে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক এখনও কাটেনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার বাণিজ্যের দখলদারি ও রাজনৈতিক ছত্রছায়া পেয়ে এই গোষ্ঠীগুলোর দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে। প্রশাসন সময়মতো কঠোর ব্যবস্থা না নিলে আরও বড়সড় সংঘর্ষ বা প্রাণহানির আশঙ্কাও রয়েছে।এক বাসিন্দার কথায়— “টেন্ডারকে কেন্দ্র করে শহরের শান্ত পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আজকের ঘটনা নাড়িভুঁড়ি কাঁপিয়ে দিয়েছে। সবসময় মনে হচ্ছে আবার কিছু হবে।”টিলাবাজারের রণক্ষেত্র-পরিস্থিতি শহরবাসীকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে—কৈলাসহরে ঠিকাদারি বাণিজ্যের দখলদারি কি আগামী দিনে আরও ভয়াবহ রূপ নিয়ে ফিরবে?