
প্রতিনিধি অনুপম পাল
কৈলাসহর,ঊনকোটি ত্রিপুরা
সাম্প্রতিক সময়ে কৈলাসহর শহরে বেপরোয়া যান চলাচলের কারণে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটছে, যা পথচারী এবং স্কুলপড়ুয়াদের জন্য চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমতে শুরু করেছিল, কারণ নিয়ম না মেনে গাড়ি চালানোর প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনের তরফে বৃহস্পতিবার সকালে এক বিশেষ অভিযান চালানো হয়।
কৈলাসহর থানার সামনে থেকে উনকোটি কলাক্ষেত্র পর্যন্ত এলাকায় পুলিশের তরফ থেকে ব্যাপক ধরপাকড় চালানো হয়। অভিযানে হেলমেটবিহীন বাইক, লাইসেন্সবিহীন টমটম, ব্যাটারিচালিত অটো এবং ওভারলোডেড যানবাহন আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডিসিএম সঞ্জীব দেববর্মা এবং পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে ডিএসপি উৎপলেন্দু নাথ ও কৈলাসহর থানার অফিসার ইনচার্জ সুকান্ত সেন চৌধুরী আরো অন্যান্য আধিকারিকরা।
শহরের মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন। অনেক বাইক আরোহী হেলমেট পরিধান করেন না, টমটম এবং অটোচালকরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া গাড়ি চালান, এবং ওভারলোডেড যানবাহন রাস্তায় চলাচল করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত তিন মাসে কৈলাসহরে প্রায় ২০টিরও বেশি ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে কয়েকটি প্রাণঘাতী ছিল।
এই প্রসঙ্গে ডিসিএম সঞ্জীব দেববর্মা বলেন, “আজকের এই অভিযান শুধু ধরপাকড়ের জন্য নয়, বরং শহরের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।” তিনি বাইক চালকদের উদ্দেশ্যে হেলমেট পরিধান করা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখার অনুরোধ জানান, যাতে ট্রাফিক আইন মেনে চলার অভ্যাস তৈরি হয় এবং দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।
এই অভিযানে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের ভূমিকাসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, যদি প্রতি মাসে অন্তত চার থেকে পাঁচবার এ ধরনের অভিযান চালানো হয়, তাহলে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা অনেকটাই উন্নত হবে। বিশেষ করে, স্কুলপড়ুয়া এবং অফিসগামী মানুষদের জন্য নিরাপদ পথ চলাচল নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও চলবে এবং আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সিসিটিভি ক্যামেরা বৃদ্ধি, মোবাইল ট্রাফিক চেকিং টিম এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রচার চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
কৈলাসহর শহরের ট্রাফিক সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে একটি উদ্বেগজনক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা এবং প্রশাসনের দৃঢ় পদক্ষেপে মানুষ আশাবাদী যে, শহরের ট্রাফিক শৃঙ্খলা শিগগিরই স্বাভাবিক হবে। তবে শুধু প্রশাসনের উপর নির্ভর করে নয়, সাধারণ মানুষকেও ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে, তবেই নিরাপদ ও শৃঙ্খলিত শহর গড়ে তোলা সম্ভব হবে।