
Oplus_0
সংবাদ প্রতিনিধি।অনুপম পাল। কৈলাসহর
ত্রিপুরা রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের কথা শাসকদল বারবার তুলে ধরেছে। ২০১৮ সালে রাজ্যে বিজেপি সরকার গঠনের পর পরিকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে শুরু করে ২০২০ সালের নতুন কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করার দাবি নিয়মিতই উঠে এসেছে শাসক নেতাদের মুখে। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষার্থীরা সেই পরিবর্তনের সুফল পাচ্ছে কি না—সেই প্রশ্ন নিয়েই এবার রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধছে।
চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে খোদ কৈলাসহর শহরের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভগিনী নিবেদিতা গার্লস হাইয়ার সেকেন্ডারি স্কুলে। অভিযোগ, চলতি মাসের ১৮ জুন বিদ্যালয়ে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের ক্লাস টেস্ট শুরু হলেও অনেক ছাত্রীকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি। এমনকি পরীক্ষার হলে ঢোকার পর তাদের বের করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠে এসেছে অভিভাবকদের তরফে।
অভিভাবকদের দাবি, এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো নোটিশ দেয়নি। তারা বলেন, “শুধু পরীক্ষার দিন গিয়ে মেয়েরা জানতে পারে, তাদের পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না। এটা কোনো ধরনের শিক্ষা নীতি?”
তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ আংশিক স্বীকার করে নিয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জীব ঘোষ জানান, “বিদ্যালয়টি সিবিএসই বোর্ডের অধীনে পরিচালিত বিদ্যা জ্যোতির অন্তর্গত। বোর্ড অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। যেসব ছাত্রীদের উপস্থিতির হার ৩০ শতাংশেরও কম, শুধুমাত্র তাদেরই পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি।”
তিনি আরও জানান, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্কুলের ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও অভিভাবক মণ্ডলীর সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে এবং সর্বসম্মতভাবেই এই নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে। পাশাপাশি, বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আগে থেকেই কয়েকবার নোটিশও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
স্কুল কর্তৃপক্ষের যুক্তি—এই সিদ্ধান্ত কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়, বরং ছাত্রীদের মধ্যে নিয়মিত উপস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতেই এমন উদ্যোগ। “আমরা চাই মেয়েরা বুঝুক—নিয়মিত ক্লাস করলে তবেই তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে ও ভালো ফল করবে,”—বলেন সঞ্জীব ঘোষ।
তবে বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি।ছাত্রীরা পরীক্ষায় বসতে না পারায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা কৈলাসহরের মহকুমাশাসক তথা বিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান তথা মহকুমা শাসক প্রদীপ সরকারের দারস্থ হন। পরে মহকুমাশাসকের হস্তক্ষেপে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করে জানায়, পরবর্তী ক্লাস টেস্টে ছাত্রীদের পরীক্ষায় বসানোর ব্যবস্থা করা হবে।
এ নিয়ে গোটা শহরে বিতর্ক তুঙ্গে। একাধিক অভিভাবক প্রশ্ন তুলেছেন, “সরকার যেখানে স্কুলছুট রোধের কথা বলছে, সেখানে শিক্ষার্থীদের এমনভাবে হঠাৎ পরীক্ষা থেকে বাদ দেওয়ার অর্থ কী? যদি অনুপস্থিতি সমস্যা হয়, তবে কি স্কুলের কর্তব্য নয় বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেওয়ার?”
নতুন শিক্ষানীতিতে স্কুলছুট প্রতিরোধ এবং পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়ানোর জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেওয়ার সুপারিশ থাকলেও এই ঘটনার পর তা আদৌ বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবক মহল।
পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আপাতত ছাত্রীরা দ্বিতীয় ক্লাস টেস্টে বসার সুযোগ পাচ্ছে। তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তব রূপ ফের একবার সামনে এসেছে। আর শাসক দলের “আমূল পরিবর্তনের” দাবি নিয়ে রাজ্যের শিক্ষাপ্রেমী মহলের মনে তৈরি হয়েছে এক গভীর সংশয়।