
Oplus_131072
কৈলাসহর,প্রতিনিধি অনুপম পাল,ঊনকোটি জেলার কৈলাশহরের জলাই গ্রাম পঞ্চায়েত। এখানকার উর্বর মাটি এবং নিরলস পরিশ্রমী কৃষকরা যুগ যুগ ধরে সবজি চাষে তাদের দক্ষতার দেখিয়ে আসছেন। মনুনদির পাড়ে প্রসারিত উর্বর জমিতে জলাই,বলেহর, কাউলিকুড়া, সমরুরপার, বিলাসপুরের কৃষকদের হাতের ছোঁয়ায় সবজি ফলছে। কিন্তু আজ সেই সবজি চাষ যেন পরিণত হয়েছে এক করুণ সংগ্রামে।
এই এলাকার কৃষকরা কৈলাশহর ও কুমারঘাটের বাজারে নিজেদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে জীবনযাপন করেন। কিন্তু শীতের মরশুম এলেই আসাম ও মেঘালয় থেকে আসা সবজির স্রোতে ঢেকে যায় স্থানীয় উৎপাদন। যার ফলে জলাইয়ের কৃষকদের পরিশ্রমে উৎপাদিত সবজির দাম কমে যেতে থাকে। উৎপাদন খরচ আর আয়ের মধ্যে এক গভীর ফারাক তৈরি হয়।
স্থানীয় কৃষক অবনি মোহন দাস ও রানা দাস জানান,এক কানি জমিতে সবজি চাষ করতে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়। সার, বীজ, কীটনাশক, এবং সেচের জন্য এই খরচ আবশ্যক। অথচ বাজারে সবজির এমন দাম পাওয়া যায় না যে সেই খরচই মিটে যাবে। কৃষকরা বাধ্য হয়ে তাঁদের সঞ্চয় ভেঙে বা ঋণ করে এই খরচ চালাচ্ছেন বলে আমাদের প্রতিনিধির কাছে জানান।
কৃষকদের আক্ষেপ, সরকার থেকে যে সামান্য সহায়তা মেলে তা সময়মতো আসে না। প্রয়োজনীয় বীজ, সার বা কীটনাশকের বদলে অপ্রাসঙ্গিক কিছু সামগ্রী দিয়ে দায় সারছে প্রশাসন। অথচ কৃষকদের প্রয়োজন সময়মতো বীজ, সঠিক দামে সার এবং কীটনাশক। নিজের পয়সায় সব কিছু কিনে চাষ করতে গিয়ে তাঁদের সংকট আরও বেড়ে যাচ্ছে বলে জানান।
এই সংকটে কৃষকেরা আর বাইরে থেকে সাহায্যের অপেক্ষায় নেই। তাঁদের পরিবারই তাঁদের শক্তি। বাবা-মা, সন্তান সবাই মিলে মাঠে কাজ করছেন। ঘামে ভেজা মাটির সঙ্গে মিশে আছে তাঁদের আশা, কিন্তু বাজারে সবজির দাম দেখে সেই আশার উপর নেমে আসে হতাশার অন্ধকার।
জলাই গ্রামের কৃষকদের আকুতি খুবই সাধারণ। সময়মতো যদি সরকার তাঁদের প্রয়োজনীয় বীজ, সার এবং কীটনাশক সরবরাহ করে, যদি সবজির ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা হয়, তবে তাঁরা এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেন। বহিরাজ্যের সবজির দাপটে স্থানীয় কৃষকদের বেঁচে থাকার অধিকার যেন কেড়ে নেওয়া না হয়।
আর তাই তাদের দাবী,সময়মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান যেমন বীজ, সার এবং কীটনাশক সময়মতো পৌঁছে দেওয়। সবজি বিক্রির সঠিক দাম নিশ্চিত করতে বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন আবশ্যক। স্থানীয় বাজারে বহিরাজ্যের সবজির দাপট কমাতে নীতিমালা প্রণয়ন। কৃষকদের জন্য ভর্তুকি এবং ঋণের ব্যবস্থা দ্রুত প্রদান করা ইত্যাদি ।
জলাই গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষকরা শুধু তাঁদের নিজের পরিবার নয়, সমগ্র এলাকার খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে অবদান রাখছেন। যদি সরকারের নীতিতে তাঁদের প্রতি একটু সহানুভূতি ও নজরদারি থাকে, তবে তাঁরা নিজেদের সংকট কাটিয়ে আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারবেন।
এই মাটির সন্তানদের প্রাপ্য শুধু সহানুভূতি নয়, তাঁদের পরিশ্রমের যথাযথ মর্যাদাও। জলাইয়ের মাটিতে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনা উদ্ভাসিত করতে আজ দরকার সমষ্টিগত উদ্যোগ,এমনটাই মনে করছেন অন্যদাতা কৃষকরা।