✍️প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
কৈলাসহরের আকাশ যেন এক রহস্যময় গল্প লিখছে। সন্ধ্যা নামতেই পুরো শহর কুয়াশার চাদরে নিজেকে ঢেকে ফেলেছে। পুরাতন মটরস্ট্যান্ড থেকে নতুন মটরস্ট্যান্ড, দুর্গাপুর থেকে পশ্চিম বাজার—গোটা কৈলাসহর যেন ধূসর মায়ার আবরণে বন্দি। বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে এক ধরনের শীতল নিস্তব্ধতা, যা শহরের রাত্রিকালীন প্রাণচাঞ্চল্যকেও স্তিমিত করে দিয়েছে।
কুয়াশার মধ্যে রাস্তার বাতিগুলো যেন কোনো দার্শনিকের চোখের মায়াবী চাহনি। আলোর ছায়া, তার অস্পষ্টতা আর কুয়াশার ঝাপসা পর্দা মিলে এক অপার্থিব আবহ তৈরি করেছে। সড়কে গাড়ির চাকা যেন থমকে গেছে। কমেছে যাতায়াত, কমেছে কোলাহল। মানুষজন নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে, কাঁধে চাদর জড়িয়ে শীতের কামড় থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে।
শহরের বাজারগুলোও তাড়াতাড়ি নিস্তব্ধতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠান্ডার কামড় এমন তীব্র যে মিনি মার্কেটের দোকানিরা রাত ৯টার মধ্যেই ঝাঁপ ফেলে দিয়েছেন। দুর্গাপুরের অলিগলিতে দেখা যাচ্ছে কুয়াশার আস্তরণে ঢাকা বাড়িঘর। প্রতিটি বাড়ি যেন গল্পের কোনো গোপন অধ্যায় খুলে দিচ্ছে।
এই কুয়াশার মোড়ানো রাত নিছক ঠান্ডা নয়, যেন প্রকৃতির সঙ্গে মানবজীবনের এক আত্মিক সংযোগ। শীতের মৌসুম এমনিতেই কৈলাসহরের মতো জায়গায় সৌন্দর্যের নতুন মাত্রা যোগ করে, আর কুয়াশা যেন সেই অনুভূতিকে আরও গভীর করে।
প্রকৃতির এই লীলাখেলায়, কৈলাসহরবাসীরা অনুভব করছেন এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ। তাদের চোখে-মুখে কুয়াশার মায়া আর ঠান্ডার কামড় একসঙ্গে খেলে বেড়াচ্ছে। প্রত্যেকের মনে যেন কবিতা ফুটে উঠছে, প্রতিটি নিঃশ্বাসে যেন এক অপূর্ব সন্ধ্যার স্বাদ।
কৈলাসহরের এই রূপ, এই কুয়াশার গল্প শহরের সাধারণ দিনগুলোকে অন্য মাত্রা দিচ্ছে। এমন একটি রাত যেন সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, প্রকৃতির কাছে মানুষ কতটাই ক্ষুদ্র, আর সেই ক্ষুদ্রতায়ও লুকিয়ে থাকে সৌন্দর্যের গভীর অনুভূতি।