প্রতিনিধি অনুপম পাল
কৈলাসহর,ঊনকোটি ত্রিপুরা
ঊনকোটি জেলার ঐতিহ্যবাহী জেলা গ্রন্থাগারটি আজ কর্মচারী স্বল্পতা, পাঠকের অনাগ্রহ এবং সরকারি উদাসীনতার শিকার হয়ে পড়েছে। কৈলাসহর শহরের আরকেআই স্কুল মাঠ সংলগ্ন এই প্রাচীন গ্রন্থাগারে বর্তমানে ৭৯,২১৩টি বই রয়েছে, যার মধ্যে ১৭,০০০ বই দীর্ঘদিনের অযত্নে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একসময় জেলার জ্ঞানতৃষ্ণা মেটানোর প্রধান কেন্দ্র ছিল এই গ্রন্থাগারটি, কিন্তু এখন নানান সমস্যায় জর্জরিত এই গ্রন্থাগার।
১৯৫৩ সালে কৈলাসহরে প্রথম গড়ে ওঠা উত্তর ত্রিপুরা জেলা গ্রন্থাগারটি একসময় পাঠকদের মিলনস্থল ছিল। ৬০ ও ৭০-এর দশকে এটি বইপ্রেমী মানুষদের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। বই পড়া ছাড়াও এখানে জাতীয় ও রাজ্য পত্রিকা পড়া, আকাশবাণীর সংবাদ শোনা এবং বিনোদনের সুযোগ ছিল। ২০০৭ সালে পূর্বতন সরকারের উদ্যোগে গ্রন্থাগারটি আধুনিক রূপে সাজানো হলেও বর্তমানে জেলা গ্রন্থাগারটি কর্মচারী সংকট এবং সরকারি অবহেলার কারণে দৈন্যদশায় পতিত। বর্তমানে ৬ জন কর্মচারীর প্রয়োজন থাকলেও মাত্র ৩ জন কর্মী আছেন। এছাড়াও, দীর্ঘদিন ধরে নৈশ প্রহরী নেই, ফলে লক্ষাধিক টাকার সম্পদ পাহারাহীন অবস্থায় রয়েছে। কিছুদিন আগে ফটিকরায় একটি গ্রামীণ পাঠাগার চালু হওয়ার কারণে এখান থেকে একজন কর্মীকে বদলি করা হয়। যদিও সম্প্রতি একজন অস্থায়ী সাফাই কর্মীকে স্থায়ী করা হয়েছে।
গ্রন্থাগারের প্রধান লাইব্রেরিয়ান অরুণাংশু দাস জানান, এখানে লেন্ডিং সার্ভিস, রেফারেন্স সার্ভিস, ফ্রি নিউজপেপার রিডিং সার্ভিস, চিলড্রেন কর্নার, ব্রেইলি সেকশনসহ মোট ১৩ ধরনের সুবিধা রয়েছে। তবে, সর্বভারতীয় পত্রিকা ও “এমপ্লয়মেন্ট নিউজ” আসার ব্যবস্থা না থাকায় পাঠকরা কম আসছেন।
গ্রন্থাগারের সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য পূর্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং কিছু অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল। বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য আলাদা শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। “রিডার অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম”-এর মাধ্যমে স্কুল, কলেজ, ও এনজিওদের সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে, যা সামান্য সাড়া পেয়েছে। তবুও, সমস্যার মূল সমাধানে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি।
জেলা গ্রন্থাগারের ঐতিহ্য রক্ষায় স্থানীয় জনগণ এবং সুধী সমাজ সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সর্বভারতীয় পত্রিকা ও চাকরির খবর সংক্রান্ত প্রকাশনা পুনরায় চালু করা এবং কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধি করা জরুরি।
একসময়ের জমজমাট গ্রন্থাগারটি যেন আবার বইপ্রেমী মানুষের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে, সেদিকে নজর দেওয়া এখন সময়ের দাবি।