
Oplus_131074
প্রতিনিধি অনুপম পাল
কৈলাসহর,ঊনকোটি ত্রিপুরা
কৈলাসহর, একটি প্রাচীন শহর। এর বুকে বয়ে চলেছে ঐতিহ্যের অক্ষয় ধারা। সেই ধারার উজ্জ্বলতম রূপ হল পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে আয়োজিত টাউন কালীবাড়ির মেলা। এই মেলা শুধু একটি উৎসব নয়, এটি এক আবেগ, এক সংযোগ, যা মানুষকে অতীতের সঙ্গে বর্তমানের বন্ধনে বেঁধে রাখে।
প্রতি বছরের মতো এবারও সোমবার সকালে টাউন কালীবাড়ির চত্বরে সূচনা হয়েছে এই ঐতিহ্যবাহী মেলার। দিনব্যাপী চলা এই আয়োজন যেন কেবল একটি মেলা নয়, বরং এক মিলনমেলা, যেখানে শহর আর গ্রামের মানুষ একই স্রোতে মিশে যায়।
কৈলাসহরের টাউন কালীবাড়ি, যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১১১ বছর আগে, এক জীবন্ত ইতিহাসের সাক্ষী। এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবসেই প্রথম শুরু হয়েছিল পৌষ সংক্রান্তি মেলা। সেই থেকে আজ অবধি এই মেলা শুধু কৈলাসহর নয়, গোটা রাজ্যের মানুষের হৃদয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।
মেলার মূল আকর্ষণ এর বৈচিত্র্যময় পসরা। পিঠেপুলি তৈরির সরঞ্জাম, রকমারি মাছ, চিত্রকর হস্তশিল্প এবং আরও কত কী! প্রতিটি দোকানে যেন সাজানো রয়েছে ঐতিহ্যের গল্প। ব্যবসায়ীরা তাদের সামগ্রী নিয়ে এসেছেন রাজ্যের নানান প্রান্ত থেকে, আর দর্শনার্থীদের ভিড়ে মেলার প্রতিটি কোণা ভরে উঠেছে প্রাণবন্ত আবহে।
গ্রামীণ ঐতিহ্যের সুর এখানে যেন নতুন করে প্রাণ পায়। মেলাপ্রাঙ্গনে আসা মানুষের চোখে-মুখে থাকে আনন্দ আর প্রত্যাশার দীপ্তি। শুধু কেনাকাটাই নয়, মেলার আসল আকর্ষণ হল মানুষে মানুষে মনের বন্ধন। এই মেলায় এসে যে কেউ নিজের শেকড়ের সন্ধান পেতে বাধ্য।
মেলা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মেলা কমিটির অধিকর্তা দেবাশীষ সেন বলেন, “এই মেলা আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক। প্রতিবছর আমরা চেষ্টা করি মেলাকে আরও সুন্দর ও ঐতিহাসিক করে তুলতে। এটি শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের জায়গা নয়, এটি মানুষের আবেগ, সংস্কৃতি এবং সম্প্রীতির মেলবন্ধন।”
কৈলাসহরের পৌষ সংক্রান্তি মেলা শুধু এক দিনের আয়োজন নয়, এটি এক ঐতিহ্যের ধারক। বছরের পর বছর ধরে এই মেলা যেন এক নতুন করে মানুষকে তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করে।
যখন মেলার আলোয় আলোকিত হয় টাউন কালীবাড়ির প্রাঙ্গণ, তখন মনে হয়, এই মেলা শুধু একটি উৎসব নয়, বরং একটি জীবন্ত ইতিহাস। এটি এক শেকড়ের সন্ধান, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মানুষের মনে আবেগের সঞ্চার ঘটায়।
কৈলাসহরের এই মেলা রাজ্যের গর্ব। এর আলো যেন যুগে যুগে ছড়িয়ে পড়ে ঐতিহ্যের জ্যোতি।