
Oplus_0
আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজে (AGMC) সিনিয়র রেসিডেন্ট নিয়োগকে কেন্দ্র করে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে ত্রিপুরা রাজ্যের চিকিৎসক সমাজে। সরকারি নিয়ম ও নীতিকে পাশ কাটিয়ে, গোপনীয়তা ও পক্ষপাতিত্বের ছায়ায় সম্পন্ন এই নিয়োগে আবারও প্রান্তিক ও পার্বত্য অঞ্চলে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রতি চরম অবিচারের অভিযোগ উঠেছে।
২০২৫ সালের ৩১ মে তারিখে জারি হওয়া এক সরকারি আদেশে বলা হয়েছে, AGMC ও জিবিপি হাসপাতালে একাধিক চিকিৎসককে পূর্ণকালীন সিনিয়র রেসিডেন্ট পদে নিযুক্ত করা হবে। যদিও আদেশে স্পষ্ট করা হয়েছে যে এই নিয়োগের সঙ্গে আর্থিক সুবিধা জড়িত নয়, তথাপি এই আদেশ ঘিরে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্বাস্থ্য দপ্তরের অভ্যন্তরীণ সূত্রমতে, এই বিজ্ঞপ্তিতে, মেধাভিত্তিক বাছাই প্রক্রিয়াও অনুসরণ করা হয়নি, এমনকি উন্মুক্ত আবেদন আহ্বান-এর কোনো চিহ্নও নেই। ফলে এই নিয়োগ একেবারেই নিয়মবহির্ভূত ও পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করেছেন চিকিৎসকরা।
রাজ্যের বিভিন্ন দুর্গম ও প্রতিকূল পরিবেশে দিনের পর দিন নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাওয়া চিকিৎসকদের অভিযোগ, তাঁদের উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সিনিয়রিটি থাকা সত্ত্বেও তাঁদের সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতের বাস্তব চিত্র উপেক্ষা করে কিছু প্রভাবশালী চিকিৎসককে স্থানান্তর করে সিনিয়র রেসিডেন্ট পদে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা স্পষ্ট পক্ষপাতিত্বের নিদর্শন।
এছাড়াও চিকিৎসক সমাজের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, এখনো পর্যন্ত কোনো ঘূর্ণায়মান (রোটেশনাল) পদ্ধতি চালু হয়নি যাতে প্রত্যন্ত এলাকায় কর্মরত চিকিৎসকরা অন্তত এক বছরের জন্য AGMC বা TMC-তে সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসেবে কাজের সুযোগ পান। এই ঘাটতি দীর্ঘদিনের বৈষম্য ও বঞ্চনার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে — এই নিয়োগ ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন (NMC)-এর নিয়ম অনুসারে হয়েছে কি না। NMC স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করেছে, সরকারি মেডিকেল কলেজে সিনিয়র রেসিডেন্ট নিয়োগ অবশ্যই স্বচ্ছ, ন্যায্য এবং উন্মুক্ত পদ্ধতিতে সম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। কিন্তু ত্রিপুরার প্রেক্ষাপটে সেই নির্দেশনা যেন শুধুই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক কড়া ভাষায় জানান, “এটি কোনো ব্যক্তিগত ক্ষোভ নয়, এটি প্রাতিষ্ঠানিক ন্যায়পরায়ণতার প্রশ্ন। আমরা চাই একটি নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং সমান সুযোগের নিয়োগ ব্যবস্থা, যেখানে প্রত্যেক সরকারি চিকিৎসক, যেখানেই কর্মরত হোন না কেন, সুযোগ পাবেন।”
এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসক মহল থেকে জোরালো দাবি উঠেছে—অবিলম্বে ৩১ মে তারিখে জারি করা নিয়োগ আদেশ স্থগিত করতে হবে। ডিরেক্টরেট অব মেডিকেল এডুকেশন ও স্বাস্থ্য দপ্তরকে একটি নির্দিষ্ট ও ন্যায্য নীতি তৈরি করতে হবে। প্রান্তিক অঞ্চলে কর্মরত চিকিৎসকদের সমান সুযোগ ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।
এখন দেখার, রাজ্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কতটা আন্তরিকভাবে এই সংকটের মোকাবিলা করেন এবং রাজ্যের চিকিৎসক সমাজের হারিয়ে যাওয়া আস্থাকে ফিরিয়ে আনেন।