
প্রতিনিধি অনুপম পাল,ঊনকোটি ত্রিপুরা
ত্রিপুরা রাজ্যের ঊনকোটি জেলার পরিকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করল। আজ, ৪ মার্চ ২০২৫, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা একদিনে মোট ১৯টি নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং আরও ১৫টি প্রকল্পের শুভারম্ভ করেন।উনার সফর সঙ্গী ছিলেন রাজ্যের সমাজ শিক্ষা ও সমাজ কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী টিংকু রায়। এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, খেলাধুলা ও সামাজিক কল্যাণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জেলার পরিকাঠামোকে আরও উন্নত করা হবে।
নতুন ১৯ টি প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল,নেশামুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে চন্ডীপুরে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ড্রাগ ডি-অ্যাডিকশন সেন্টার – যার আনুমানিক ব্যয় ২০ কোটি টাকা।শিশু কল্যাণ সমিতি বিল্ডিং নির্মাণ – ব্যয় ৯.২৫ লক্ষ টাকা।কৈলাশহর রামকৃষ্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন দ্বিতল ভবন – ব্যয় ৮.৫১ কোটি টাকা।কৈলাশহর রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ে ৮০০ আসন বিশিষ্ট অডিটরিয়াম নির্মাণ – ব্যয় ৯.২৫ লক্ষ টাকা।বাঙালি বস্তি থেকে ডেপাছড়া, জিওনবাড়ি থেকে বর্শিছড়া, বর্শিছড়া থেকে ধাতুছড়া সংযোগকারী রাস্তার উন্নয়ন – ব্যয় ৮.৩২ কোটি টাকা।কৈলাশহরে সিডিপিও অফিস ভবন নির্মাণ – ব্যয় ১.৪২ কোটি টাকা।চন্ডীপুরে ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন অফিস নির্মাণ – ব্যয় ৩.৯৯ কোটি টাকা।কৈলাশহর পাইতুর বাজার ওয়ার্কিং ওমেন হোস্টেল নির্মাণ – ব্যয় ১১.৪০ কোটি টাকা।চিনিবাগানে সিন্থেটিক ফুটবল মাঠ নির্মাণ – ব্যয় ৫.৩৬ কোটি টাকা। দেওছড়ায় মাল্টিপারপাস কমিউনিটি হল নির্মাণ – ব্যয় ৮০ লক্ষ টাকা।
এছাড়াও আরো ১৫টি প্রকল্পের শুভারম্ভ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেগুলি হল,টিলাবাজার উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নতুন দ্বিতল ভবন – ব্যয় ২.৪৮ কোটি টাকা।ভগিনী নিবেদিতা উচ্চতর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়ন – ব্যয় ২.৪৮ কোটি টাকা।কৈলাশহর জেলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৫০ শয্যার হোস্টেল উদ্বোধন – ব্যয় ৫.৯৭ কোটি টাকা।আরজিএম হাসপাতালের সামনে কমার্শিয়াল শেড নির্মাণ – ব্যয় ৩৬.৬৮ লক্ষ টাকা।কৈলাশহর পুর পরিষদের নতুন অফিস ভবনের দ্বিতীয় তল নির্মাণ – ব্যয় ৮৮.১০ লক্ষ টাকা।মাছ বাজারে ১৫টি মার্কেট স্টল নির্মাণ – ব্যয় ২৮.২৯ লক্ষ টাকা।পঞ্চমগর এডিসি ভিলেজে শৌচালয় যুক্ত ৯টি মার্কেট স্টল – ব্যয় ২৬.৬৬ লক্ষ টাকা।সামরুছড়ায় উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ – ব্যয় ২০ লক্ষ টাকা।আরকেএম কলেজ সংলগ্ন পুকুর সংস্কার ও সৌন্দর্যায়ন – ব্যয় ১.৪৮ কোটি টাকা।ফুলতলী গ্রাম পঞ্চায়েতে আরসিসি ফুট ব্রিজ নির্মাণ – ব্যয় ২৩.৫০ লক্ষ টাকা।সিঙ্গেরবিল কমিউনিটি হল নির্মাণ – ব্যয় ১.০৪ কোটি টাকা।টিলাগাঁওয়ে নতুন তহশীল অফিস – ব্যয় ৩০ লক্ষ টাকা।বীরচন্দ্রনগর ও শ্রীরামপুরে পৃথক দুটি তহশীল অফিস – ব্যয় ৬০ লক্ষ টাকা।চন্ডীপুর ব্লক অফিসের সম্প্রসারণ – ব্যয় ১.১৪ কোটি টাকা।
আজকের অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঊনকোটি জেলার জেলা শাসক দীলিপ কুমার চাকমা। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ঊনকোটি জেলা পরিষদের সভাধিপতি অমলেন্দু দাস,টিআইডিসি চেয়ারম্যান নবাদল বণিক,রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান মবস্বর আলী,ঊনকোটি জেলার পুলিশ সুপার কান্তা জাঙ্গির সহ অন্যান্য বিশিষ্ট জনেরা।
মন্ত্রী টিংকু রায় উন্নয়ন মূলক প্রকল্পের শিলান্যাস ও বিভিন্ন প্রকল্পের শুভারম্ভ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন,ঊনকোটি জেলার সার্বিক বিকাশের পথে এটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে জেলার সামগ্রিক পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান আরও সমৃদ্ধ হবে। উন্নয়নের এই ধারাকে অব্যাহত রাখতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা বলেন, “রাজ্যের উন্নয়ন , প্রতিটি জেলা, বিশেষত মফস্বল এলাকাগুলিকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়নের আওতায় আনা হচ্ছে। ঊনকোটি জেলার জন্য এই বহুমুখী প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন প্রমাণ করে যে, রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন,প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৮ সালে হিরা মডেলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার কাজ জোর কদমে চলছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন যজ্ঞ চলছে। রাস্তা,বিমান পরিষেবা,রেল পরিষেবায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে রাজ্যে। আগামী দিনে আরো উন্নয়ন সাধিত হবে এই রাজ্যে। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য আধুনিক পরিকাঠামো ও উন্নত সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার বদ্ধ পরিকর।
রাজ্য সরকার ঊনকোটি জেলাকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিকাঠামোর দিক থেকে আরও উন্নত করতে কাজ করে চলেছে। নতুন ড্রাগ ডি-অ্যাডিকশন সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন, রাস্তা নির্মাণ, খেলার মাঠ ও মহিলা কর্মজীবীদের জন্য হোস্টেল এই জেলার সার্বিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও তিনি রেল এর বিষয়ে বলতে গিয়ে জানান,ধর্মনগর থেকে কৈলাসহর পর্যন্ত রেল আসবে চলেছে খুব শিগ্গির।
এই উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, রাজ্য সরকার রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিকেও উন্নয়নের মূলস্রোতে আনতে বদ্ধপরিকর। ভবিষ্যতে আরও নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা উন্নয়নকে প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চাই।”