
কৈলাসহর,প্রতিনিধি অনুপম পাল,যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষ এগোচ্ছে। প্রযুক্তি আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। আমরা আজ এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে, যেখানে যন্ত্র মানুষের কাজের সঙ্গী নয়, বরং প্রতিযোগী হয়ে উঠছে। এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ। ইট ভাঙার মতো সাধারণ একটি কাজেও এখন সেই বাস্তবতা দৃশ্যমান।
এক সময় ইট ভাঙার শব্দে ভরে যেত নির্মাণস্থল। হাতুড়ির আঘাতে একের পর এক ভাঙত ইট। রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে পরিশ্রম করতেন শ্রমিকরা। তাঁদের শ্রমের মূল্যেই একটি পরিবারে জ্বলত প্রদীপ, ফুটত হাসি। কিন্তু আজ সেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। অত্যাধুনিক ইট ভাঙার মেশিন এসে তাদের জায়গা দখল করেছে। স্বল্প সময়ে, স্বল্প খরচে এই মেশিন ভেঙে দিচ্ছে অগণিত ইট। ফলে আর প্রয়োজন নেই সেই মানবশ্রমের, যা একসময় ছিল অপরিহার্য।
একজন বৃদ্ধ শ্রমিকের চোখে বিষাদের ছাপ স্পষ্ট। তিনি বললেন, “আগে প্রতিদিনের কাজ শেষে বাড়ি ফিরে মনে হতো, আজ পরিবারকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে পেরেছি। কিন্তু এখন মেশিন আমাদের কাজ কেড়ে নিচ্ছে। সন্তানদের স্কুলের খরচ জোগাতে পারছি না, সংসার চালানোও কঠিন হয়ে পড়েছে।” তাঁর কথায় এক ধরনের যন্ত্রণার প্রতিধ্বনি শোনা যায়।
ইট ভাঙার মেশিন যে এক ধরনের প্রযুক্তিগত আশীর্বাদ, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এটি নির্মাণ খরচ কমাচ্ছে, কাজের গতি বাড়াচ্ছে। কিন্তু যেসব মানুষ এই কাজের ওপর নির্ভরশীল, তাদের জীবনের গল্পটা এতটা সুখের নয়। তাদের জীবন থেকে একরকম অনাহার আর অনিশ্চয়তা কৌশলে ঢুকে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি আমাদের সময়ের দাবি। এটি জীবনকে সহজতর করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে কিছু মূল্যও আদায় করেছে। শ্রমিকরা যদি প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারেন, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে। বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।
সরকারের নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শ্রমিকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, তাদের নতুন কাজে দক্ষ করে তোলা এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা জরুরি। পাশাপাশি, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যেন মানবিকতার মৃত্যু না ঘটে, সেদিকে নজর দিতে হবে।
প্রযুক্তি উন্নতির প্রতীক। কিন্তু উন্নতির এই যাত্রাপথে যেন কারও জীবনে অন্ধকার না নেমে আসে। একেকটি মেশিন যখন শ্রমিকের হাত থেকে কাজ কেড়ে নেয়, তখন শুধু একজন শ্রমিক নয়, একটি পরিবার দিশাহীন হয়ে পড়ে। তাই প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করাই হতে হবে সভ্যতার নতুন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একত্রে কাজ করতে হবে আমাদের সকলকে।