
Oplus_131072
প্রতিনিধি অনুপম পাল
কৈলাসহর,ঊনকোটি ত্রিপুরা
যখন সবে নতুন দিনের আলো ফুটেছে, তখনই প্রশাসনের আধিকারিকরা পুলিশ নিয়ে চড়াও হলেন গৌরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের তিন নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি পরিবারের উপর। কেড়ে নেওয়া হল মাথার ছাদ। মুহূর্তের মধ্যেই ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। হতভাগ্য পরিবারগুলোর হাতে সময়ও দেওয়া হলো না প্রিয় জিনিসগুলো গুছিয়ে নেওয়ার!
এক মা তার ছোট্ট সন্তানকে আঁকড়ে ধরে চিৎকার করছিলেন, “আমাদের একটু সময় দিন, অন্তত ছেলেটার ওষুধগুলো নিয়ে নিতে দিই!” কিন্তু কে শোনে কার কথা! লাঠির আঘাতে সে কান্না মিলিয়ে গেল প্রশাসনের নিষ্ঠুরতার মধ্যে। পুলিশ, প্রশাসন – সবাই একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ল ঘর ভাঙতে। ঘরের বেড়া কেটে ফেলা হল, দরজা-জানালা উপড়ে ফেলা হল, যেন তারা অপরাধী! একরত্তি শিশুটিও তাদের বর্বরতার হাত থেকে রেহাই পেল না। পুলিশের লাঠির আঘাতে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
তিনটি পরিবার। মোট এগারো জন। এদের মধ্যে আছেন ফিরোজ শেখ ও তার পরিবার, আছেন হাসনা বেগম, যার স্বামী বহু আগেই তাকে ছেড়ে চলে গেছে। নিজের দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি গৃহ পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান। আছেন কাদির আলী, যিনি দিনমজুরির পরিশ্রমে পরিবার চালান। ২০১৯ সাল থেকে তারা এখানে বাস করছিলেন। তাদের অপরাধ কী? শুধুই সরকারি জমিতে আশ্রয় নেওয়া!
আজ তারা নিঃস্ব। গাছের নিচে, অন্যের বারান্দায় ঠাঁই নিয়েছেন। কিন্তু বর্ষাকাল আসছে, তখন কোথায় যাবেন? কোথায় থাকবে ছোট ছোট শিশুগুলো? প্রশাসনের একটুও মানবিকতা নেই? গরিব মানুষদের জন্য সরকারের কি কোনো দায়িত্ব নেই?
সবচেয়ে লজ্জার বিষয়, শুধু ঘর ভাঙার মধ্যেই প্রশাসন থামেনি। ঘরের আশেপাশের সবজির গাছ পর্যন্ত কেটে দিয়েছে। কিছু কিছু সবজি প্রশাসনের লোকজন লুট করেও নিয়ে গেছে! একদিকে ঘরহারা, অন্যদিকে খাবারের সংস্থানও শেষ! এই নিষ্ঠুরতা কি মেনে নেওয়া যায়?
আজ তারা চোখের জলে সরকারের কাছে আকুতি জানাচ্ছেন, “আমাদের মাথার ছাদ ফিরিয়ে দিন! অন্তত বর্ষার আগে আমাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করুন।” কিন্তু প্রশাসন কি তাদের কান্না শুনবে? নাকি গরিবের কান্না শুনতে পাওয়ার জন্য প্রশাসনের কানে কোনো দরজা নেই?
এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে সমাজ কি সোচ্চার হবে? নাকি এখনও নির্বাক দর্শক হয়ে থাকবে আমাদের নিষ্ঠুর সমাজ।