
Oplus_131072
প্রতিনিধি অনুপম পাল
কৈলাসহর,ঊনকোটি ত্রিপুরা
শীতের সকালে যখন আমরা সকলে উষ্ণ কম্বলের মধ্যে অলস সময় কাটাই, তখন কেউ কেউ ভোরের আলো ফোটার আগেই শুরু করেন তাদের দিন। আর এই কাউকেই আমরা অধিকাংশ সময় ভুলে যাই। আমাদের শহর, আমাদের পাড়াগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার যে মানুষগুলো অক্লান্ত পরিশ্রম করেন, তারা সেই অদৃশ্য নায়ক।
যখন সকালের ঘড়ির কাঁটা সাতটা ছুঁয়েছে, তখন হয়তো আমরা এক কাপ গরম চায়ের জন্য অপেক্ষা করছি বা অফিস যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। কিন্তু সেই একই সময়ে কৈলাসহর পুর পরিষদ এলাকার কৃপেশ মালাকার, অশোক বাসপার, বিপুল শব্দকার, নৃপেন্দ্র বর্মন বা স্মৃতি দাসের মতো পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিজেদের কাজে ডুবে যান। ভোরের হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় সামান্য শীতবস্ত্র গায়ে জড়িয়ে তারা ঝাড়ু হাতে বেরিয়ে পড়েন। কেউ আবার প্লাস্টিকের বোতল, পিচবোর্ডের বাক্স কুড়িয়ে সামান্য রোজগারের জন্য সংগ্রামে লিপ্ত।
এই কাজ তাদের কাছে শুধু পেশা নয়,এটি এক নীরব দায়িত্ব। যখন আমরা আমাদের মৌলিক দায়িত্ব, ‘স্বচ্ছতা’ বজায় রাখার কথা ভুলে যাই, তখন তারাই আমাদের জন্য সেই দায়িত্ব পালন করে। শীতঘুমে আচ্ছন্ন পাড়া কিংবা কুয়াশার চাদরে ঢাকা শহর তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিদিন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়।
দারিদ্র্যের শেকলে বাঁধা এই মানুষগুলো নিজেদের পরিবারের অর্থনৈতিক ভারসাম্য আনার জন্য শৈত্যপ্রবাহকে উপেক্ষা করেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ সরকারি আর্থিক সহায়তা পান, আবার অনেকেই দিনের পর দিন কষ্ট সহ্য করেও জীবিকার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। গীতা পাল বা মায়া দাসের মতো মানুষ, যারা বোতল বা পিচবোর্ড কুড়োনোর কাজ করেন, তারাও এই সমাজেরই অংশ। তারা আমাদের মতোই কেউ, যাদের হাত ধরেই শহরের সৌন্দর্য রক্ষা পায়।
আমরা কি কখনও ভেবে দেখি, পথ এমন ঝকঝকে-পরিষ্কার থাকে কীভাবে? ভোরের পথিক হয়ে যারা এই শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় নিয়োজিত, তাদের অনেকেই আমাদের দৃষ্টির আড়ালে রয়ে যান। কিন্তু যারা তাদের সঙ্গে একটু কথা বলেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, তাদের জীবনের এই সংগ্রাম অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাদের মুখের সামান্য হাসি আমাদেরও আনন্দিত করে।
সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। কৃপেশ, অশোক, নৃপেন্দ্র কিংবা মায়ার মতো মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা দেখানো আমাদের নৈতিক কর্তব্য। তাদের শ্রমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও ছোট ছোট পরিবর্তন আনা প্রয়োজন—রাস্তা বা পাড়া পরিষ্কার রাখা, প্লাস্টিক দূষণ কমানো ইত্যাদি।
এই সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের ছোট ছোট প্রয়াসেই গড়ে উঠতে পারে একটি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, আর সুস্থ নগর। আর সেই পথে যাদের শ্রম ও ভালোবাসা প্রতিদিন যোগ হয়, তাদের জন্য আমরা সকলে মিলে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিই। তারা ভালো থাকুক, তাদের পরিবারের মুখে হাসি ফুটুক—এটাই আমাদের এই প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য।